বাগেরহাটের চাঞ্চল্যকর র্যাব ও কোস্ট গার্ডের তিন সদস্যকে হত্যা মামলায় ছয় ডাকাতকে দেয়া নিম্ন আদালতের ফাঁসি বহাল চেয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
নিম্ন আদালতের রায়ের ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি করে গতকাল মঙ্গলবার ছয় ডাকাতের ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করা হবে বলে জানা গেছে। বিষয়টি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ছয় ডাকাতের ফাঁসির সাজা কমিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল ফাইল করবো। আদালতের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর আমরা সুপ্রিমকোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনে যাব।’
মঙ্গলবার বাগেরহাটের চাঞ্চল্যকর র্যাব ও কোস্ট গার্ডের ৩ সদস্য হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি করে দ্বিধা বিভক্ত রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। সে রায়ে জেষ্ঠ্য বিচারপতি নিজামুল হক সকাল আসামিকে খালাস দেন। অপর বিচারপতি মো. ফারুক ছয় ডাকাত (এ মামলার আসামি) ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও নিম্ন আদালতের সাতজনকে দেয়া যাবজ্জীবনের সাজা বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন। এ কারণে রায়টি হয় দ্বিধা বিভাক্ত। নিয়মানুযায়ী এ রায় ঘোষণার জন্য প্রধান বিচারপতি অন্য একটি বেঞ্চ গঠন করে দেবেন। সেখানে যে রায় আসবে সেটিই চুড়ান্ত রায় বলে গন্য হবে। বিচারপতি মো. ফারুক এ মামলার ছয় ডাকাতকে ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবেন।
আদালতে এক আসামির পক্ষে ছিলেন প্রবীর হালদার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুজ্জামান (রুবেল) ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম আজাদ। পলাতকদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মমতাজ বেগম।
২০১৪ সালে এ মামলার পলাতক আসামি ইলিয়াস হোসেন দেশে এসে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন। সে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি করে আজ হাইকোর্ট এ রায় ঘোষণা করলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুজ্জামান রুবেল বলেন, ‘এ মামলার একজন পলাতক আসামি ইলিয়াস হোসেন ২০১৪ সালে বিদেশ থেকে এসে, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেন। ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তি করে এ রায় ঘোষণা করা হয়েছে।’
নিয়মানুযায়ী, দ্বিধাবিভক্ত রায় আসায়ে এ মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি নিষ্পত্তির জন্য একজন বিচারপতির বেঞ্চ (একক বেঞ্চ) গঠন করে দিবেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে সুন্দরবন সংলগ্ন পশুর নদীতে অভিযানে যায় র্যাব ও কোস্টগার্ডের একটি দল। অভিযানে ডাকাতদের একটি ট্রলারে র্যাব ও কোস্টগার্ড সদস্যরা উঠে পড়লে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ডাকাতরা কোস্টগার্ড সদস্য এমএইচ কবির, এমএ ইসলাম ও র্যাব সদস্য পিসি কাঞ্চনকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরদিন পশুর নদী থেকে ওই তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মামলা দায়েরের নয় বছর পর ছয় ডাকাতের ফাঁসি ও সাতজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন বাগেরহাটের জেলা ও দায়রা জজ আদাল। নিম্ন আদালতের রায়ে ফাঁসি দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মোড়েলগঞ্জ উপজেলার গাবগাছিয়া গ্রামের রফিকুল শেখ, কুদ্দুস শেখ, ইদ্রিস শেখ, বাবুল শেখ এবং খাল খুলিয়া গ্রামের আলকাত ফকির ও ইলিয়াস শেখ। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- গাবগাছিয়া গ্রামের আকরাম শেখ, আলম শেখ, বাদশা শেখ, জামাল শেখ, কামাল ওরফে সুমন শেখ, রিয়াজুল শেখ ও হোগলা ডাঙ্গা গ্রামের আসলাম শেখ।
অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় নান্না শেখ ও মিজানুর রহমান নামে দুই আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, আসামিদের মধ্যে খালাস পাওয়া দুইজন ছাড়া বাকিরা সবাই পলাতক।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়ার খবর পেয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন পশুর নদীতে অভিযানে যায় র্যাব ও কোস্টগার্ডের একটি দল। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হলে এক পর্যায়ে ডাকাতদের কোনঠাসা করে তাদের ট্রলারে উঠে পড়েন র্যাব ও কোস্টগার্ড সদস্যরা।
ট্রলারে ডাকাতদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে আসামিরা কোস্টগার্ড সদস্য এমএইচ কবির, এমএ ইসলাম ও র্যাব সদস্য পিসি কাঞ্চনকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরদিন পশুর নদী থেকে ওই তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় র্যাব-৬ এর তৎকালীন উপ সহকারী পরিচালক মহসিন আলী অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মংলা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে এ মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামি বাদশা ও জামাল ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় এবং বাকিদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেন। জামিন পাওয়ার পর এ আসামিরা এখনো পলাতক রয়েছেন।